জামিয়ার কার্যক্রম

শিক্ষা বিভাগঃ

বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দের চিন্তাধারা ও পাঠ্যনীতির অনুসরণে আরবী বর্ণমালা হতে শুরু করে ইসলামী শিক্ষার সর্ব্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পর্যন্ত সুদক্ষ শিক্ষক মন্ডলির মাধ্যমে যথারীতি শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড) এর পাঠ্য তালিকা অনুযায়ী গোটা শিক্ষা কোর্সটি যথাক্রমে ৫ বছর ইবতেদায়ী (প্রাথমিক), ৫ বছর মুতাওয়াসিতাহ (মাধ্যমিক), ২ বছর সানুবিয়া (উচ্চ মাধ্যমিক), ২ বছর ফযীলত (স্নাতক) ও ১ বছর দাওরায়ে হাদীস বা তাকমীল (স্নাতকোত্তর), সর্বমোট ১৫ বছরের শিক্ষা কোর্স ৫টি ধাপে বিন্যস্ত রয়েছে। বেফাকের অধীনে হিজ ও কেরাত বিভাগসহ ৭টি স্তরে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা হয়। উল্লেখিত ১৫ বছরের কোর্সে নিম্নে বর্ণিত বিষয় সমূহ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তা’ছাড়া হিফয সমাপ্তকারী ও স্কুল থেকে আগত ছাত্ররা যাতে তাদের বয়স অনুপাতে স্বল্প সময়ে জামাত লাইনের কিতাবাদী সমাপ্ত করতে পারে এজন্য “বিশেষ জামাত” নামকরণে একটি জামাত খোলা রয়েছে।

পাঠ্যভূক্ত বিষয়সমূহ

১। তফসির ও তরজমায়ে কোরআন

২। উসূলে তফসির ও উলূমূল কোরআন

৩। হাদীস (ছেহাছিত্তা ও অন্যান্য)

৪। উসূলে হাদীস ও তারিখে হাদীস

৫। ইলমে আকায়েদ ও কালাম

৬। ইলমে ফিকাহ্

৭। উসূলে ফিকাহ্

৮। ইলমে েফারায়েয

৯। ইলমে লোগাত ও আদব

১০। ইলমে বালাগাত

১১। ইলমে মান্তিক

১২। ইলমে হিকমাত

১৩। ইলমে মোনাজাত

১৪। ইকতেছাদিয়াত (অর্থনীতি)

১৫। ইলমে তারিখ (ইতিহাস)

১৬। ইলমে নাহু

১৭। ইলমে সরফ

১৮। ফার্সী

১৯। উর্দূ

২০। বাংলা সাহিত্য ও ব্যকরণ

২১। ইংরেজী

২২। অংক

২৩। সমাজ বিজ্ঞান

২৪। কেরাত ও তাজবীদ

২৫। তাহফীযুল কোরআন (হিফজুল কুরআন)

২৬। নাযেরা (হিফজের উপযোগীকরণ)

২৭। নূরানী (শিশু শ্রেণী)

ছাত্রদেরকে চরিত্রবান, ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শ নাগরিক ও যোগ্য হাক্কানী আলেমরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থাই অত্র জামিয়াতে বিদ্যমান রয়েছে।

তাহফীযুল কুরআন (হিফয) বিভাগঃ

উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য হাফেযে কোরআন তৈরীর জন্য আবশ্যকীয় দক্ষ হাফেয ও শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে স্বতন্ত্র আবাসিক হিফযখানা চালু রয়েছে, যার ছাত্র সংখ্যাও আশাতীত। এর অধীনেই রয়েছে একটি নাযেরা বিভাগ যাতে ছেলেরা উত্তমরূপে কোরআন শরীফ পড়ার যোগ্যতা লাভের পর হিফয শুরু করতে পারে ।

ক্বেরাত ও তাজবীদ বিভাগঃ

সহীহ্ শুদ্ধভাবে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করার যোগ্যতা অর্জনের জন্য দক্ষ ক্বারী সাহেবের তত্ত্বাবধানে কেরাত বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে চালু রয়েছে।

তাখাস্সুস ফিল ফিক্হে ওয়াল বুহুসিল ইসলামিয়া বিভাগঃ

বিভাগটির কোর্স দুই বছর। তাকমীল সমাপনকারী ছাত্রদেরকে ফেকাহ্ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করা তথা যোগ্য মুফতী হিসাবে গড়ে তোলা এই বিভাগের লক্ষ্য।

তাখাস্সুস ফি উলূমিল হাদীস বিভাগঃ

বিভাগটির কোর্স দুই বছর । তাকমীল সমাপনকারী ছাত্রদেরকে হাদীস শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করার জন্য এ বিভাগটি গড়ে তোলা হয়েছে।

আরবী আদব বিভাগঃ

এ বিভাগটি এখনও পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

দাওয়াত ও তাবলীগ বিভাগঃ

ইলমে দ্বীন হাছিল করার পাশাপশি নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করার এবং সমাজের সকলের নিকট উহা পৌঁছিয়ে দেয়ার অপরিহার্যতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ছাত্রগণ লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় তাবলীগী জামাতের সাথে প্রোগ্রাম করে এলাকায় নিয়মিত গাশ্ত করে থাকে। এ কাজের জন্য একজন মোবাল্লীগ নিয়োগ করা আছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি উস্তাদকেই চিল্লায় যাওয়ার জন্য সবেতনে এক চিল্লার ছুটি দেয়ার বিধান চালু আছে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে দু’টি কথাঃ

বাংলাদেশের উলামায়ে কিরাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও মাতৃভাষায় অপারদর্শীতার দরুন তাঁরা সমাজে নিজেদের যোগ্যতা, এলমের প্রতিফলন ও বিকাশ সাধন করতে পারছিলেন না। যার ফলে এ দেশে অতীতে ইসলাম, ইসলামী ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ প্রচারে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটেছে। এহেন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে অত্র জামিয়া বহু পূর্ব হতেই বাংলা ভাষার উপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের উপার্জিত বিদ্যা ও মনের ভাব মাতৃভাষায় প্রকাশ করার পূর্ণ যোগ্যতা লাভ করতে পারে।

ফাতওয়া বিভাগঃ

জামিয়ার এ বিভাগটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্থ একটি বিভাগ। দেশবাসী প্রয়োজনীয় মাস্আলা-মাসায়েল ও ফাতওয়া-ফরায়েয সংগ্রহ করার জন্য এ বিভাগের প্রতি খুবই আগ্রহী ও আস্থাশীল। এ বিভাগ হতে ধর্মীয় নানা সমস্যা ও জটিলতার সুষ্ঠু সমাধান প্রদান করা হয়।

ছাত্রাবাস ও ফ্রি বোর্ডিংঃ

বিভিন্ন জামাতের ছাত্রগণ লেখা পড়ায় নিমগ্ন থেকে ছাত্রাবাসটি একটি জীবন্ত বিদ্যানিকেতনে পরিণত করে রাখে। কঠোর নিয়ম-শৃংখলা ও আইনের শাসনের মাধ্যমে এটিকে একটি আদর্শ ছাত্রাবাসে পরিণত করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন জামাতের বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন দরিদ্র ও এতিম ছাত্রদেরকে জামিয়া বোর্ডিং হতে ফ্রি খানা প্রদান করা হয়।

কুতুবখানাঃ

জামিয়ার কুতুবখানা একটি ঐতিহ্যবাহী কুতুবখানা। বহু বিষয়ের বিপুল সংখ্যক মূল্যবান কিতাবাদীতে সজ্জিত এ কুতুবখানাটির এক তৃতীয়াংশ কিতাবাদী ১৯৭১ খ্রিঃ সনে বিনষ্ট হয়। বর্তমানে এতে মজুদ কিতাবের সংখ্যা ১২ হাজারের উপর ।

জামিয়ার প্রশাসনিক বিভাগসমূহঃ

দফতরে ইহতেমাম (মুহ্তামিম/মহাপরিচালক)ঃ

যার সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দক্ষ পরিচালনায় এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠের অন্যতম। যিনি প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হিসেবে সকল বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শন করতঃ অতন্দ্র প্রহরীর মত নিজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন ।

দফতরে তা’লীমাতঃ

এ দফতরের মাধ্যমে শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করা হয়।

মাতবাখ (খাদ্য ব্যবস্থাপনা)ঃ

আবাসিক ছাত্রদের জন্য খাবার তৈরী, সুশৃঙ্খল বিতরণ, খানা ক্রয়কারী ছাত্রদের টাকা গ্রহণ এবং সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

ছাত্রাবাস তত্ত্বাবধান বিভাগঃ

আবাসিক ছাত্রদের সার্বিক তত্ত্বাবধান এ বিভাগের প্রধান দায়িত্ব। এ বিভাগ অতন্ত্র প্রহরীর মত দিবা-রাত্র আবাসিক ছাত্রদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ছাত্রদের তাকরার বা পাঠ প্রস্তুতি নিয়মিত পরিদর্শন করে।

হিসাব রক্ষণ বিভাগঃ

জামিয়ার সাধারণ ও দরিদ্র তহবিলের বিভিন্ন খাতের টাকা গ্রহণ করা, আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা, যাবতীয় ব্যাংকিং লেন-দেন করা, বাজেট ও অডিট পেপার তৈরী করা, আর্থিক বছরের শেষে সরকারের রেজিষ্ট্রিকৃত চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট দ্বারা আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করানোর ও অডিট আপত্তি বিধিমতে সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এক কথায় আর্থিক লেনে-দেনের যাবতীয় কার্যক্রমের দায়িত্ব এ বিভাগ পালন করে।

সংস্থাপন বিভাগঃ

এ বিভাগে সংস্থাপন বিষয়ক যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। যথা ঃ অফিসিয়াল করেস্পন্ডেন্সস, শিক্ষক-কর্মচারীগণের ব্যক্তিগত ফাইল সংরক্ষণ, দরিদ্র এবং সাধারণ তহবিলের বিল ভাউচারের হিসাব পরীক্ষা করা ইত্যাদি।

মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন পরিকল্পনাঃ

ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত মাদরাসা সমূহের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সুসংহতকরণের উদ্দেশ্যে ১৯৮২ ঈসায়ীতে “তানযীমুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়া আল-আরাবিয়া” নামেবৃহত্তর মোমেনশাহী অঞ্চলের ছয় শতাধিক কওমী মাদরাসা সমূহের একটি আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ সংগঠন জাতীয় বোর্ড “বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ” এর অনুকূলে ব্যাপক কর্মসূচী প্রণয়ন করতঃ কাজ করে যাচ্ছে।

জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম/মহাপরিচালক মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ সাহেব উক্ত “তানযীমুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়া আল-আরাবিয়া”-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর কেন্দ্রীয় দক্তর জামিয়া ইমদাদিয়ায় অবস্থিত। বর্তমানে এ সংগঠনটি বৃহত্তর মোমেনশাহী অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে আশ-পাশের জেলা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

বহুতল বিশিষ্ট ছাত্রাবাসের পরিপূর্ণ নির্মাণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নঃ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ায় ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সাহায্য সহযোগীতায় জামিয়ার আঙ্গিনায় পশ্চিম ও উত্তর পার্শ্বে ৭ (সাত) তলা ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২.৫ (আড়াই) কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সাধারণ মুসলমানদের সাহায্য সহযোগীতায় এগিয়ে চলছে।

জামিয়ার দক্ষিণ দিকের ৫ (পাঁচ) তলা ও পূর্ব দিকের ৪ (চার) তলা ভবনটি পুরাতন হওয়ায় এবং ছাত্র সংকুলান না হওয়ায় তা ভেঙ্গে ৭ (সাত) তলা ভবন তৈরী করতে বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে অভিজ্ঞদের মতে ১১ (এগার) কোটি টাকার উপর আবশ্যক।